বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে তথ্যপ্রযুক্তি ভুবনে তরুণদের কাছে বহুল আলোচিত বিষয়ের একটি হলো অনলাইন ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং৷ যদিও আমাদের দেশে এখনো  বিষয়টি নতুনকিন্তু এরই মধ্যে অনেকে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যকে পুরোপুরি বদলে দিতে সক্ষম হয়েছে৷ পড়ালেখা শেষে বা পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং করে যেকেউ গড়ে নিতে পারেন নিজের ভবিষ্যত্ ক্যারিয়ার৷ আর অনলাইনে বেশ কিছু সাইট রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে সহজেই ফ্রিল্যান্সং কাজ পাওয়া যায়।

কয়েকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট হচ্ছে:

www.fiverr.com www.RentACoder.com, www.GetAFreelancer.com, www.GetACoder.com, www.Scriptlance .com, www.Joomlancers.com, www.oDesk.com   ইত্যাদি।

নিচে কয়েকটি সাইট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:



www.fiverr.com

 ফাইবারঃ ফাইবার খুবই জনপ্রিয় একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস যার মাধ্যমে আপনি আপনার সার্ভিস গুলো বিক্রি করতে পারবেন।
যেমন, আপনি ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা দিতে পারেন। বর্তমান বিশ্বে হ্যাকিং এর কার্যক্রম আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ার কারনে এবং সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি হওয়ার ফলে  প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যাক্তিরাই তাদের ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আপনাকে  ফাইবারের মাধ্যমে আপনার সার্ভিস গ্রহণ করতে পারে।
এক্ষেত্রে আপনাকে ফাইবারে একটি একাউন্ট তৈরি করে আপনার সার্ভিসটি গিগ আকারে তুলে ধরতে হবে।
www.RentACoder.com
রেন্ট--কোডার  প্রায় দুই লক্ষ কোডার রেজিস্ট্রেশন করেছে। এই সাইটে প্রতিদিনই প্রায় ২৫০০ এরউপর কাজ পাওয়া যায়। সাইটের সার্ভিস চার্জ বা কমিশন হচ্ছে প্রতিটি কাজের মোট টাকার ১৫যা কাজসম্পন্ন হবার পর কোডারকে পরিশোধ করতে হয়। 
এই প্রতিবেদনটি মূলত রেন্ট--কোডার সাইটকে ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। তবে মূল ধারনা প্রতিটি সাইটেরক্ষেত্রেই প্রায় একই।

www.GetAFreelancer.com or www.FreeLancer.com

এই সাইটে মোট কোডার বা প্রোভাইডারের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় সাত লক্ষ। এই সাইটেও প্রায় ২৫০০ এর উপরকাজ প্রতিদিন পাওয়া যায়। সাইটির সার্ভিস চার্জ হচ্ছে প্রতিটি কাজের মোট টাকার ১০% 
তবে গোল্ড মেম্বারদের জন্য কোন সার্ভিস চার্জ নেই। গোল্ড মেম্বার হতে প্রতি মাসে আপনাকে মাত্র ১২ ডলারপরিশোধ করতে হবে। নতুন ইউজারদের জন্য এই সাইটে ট্রায়াল প্রোজেক্ট নামে একটি বিশেষ ধরনের কাজপাওয়া যায় যাতে শুধুমাত্র নতুন কোডারাই বিড করতে পারবে। ফলে প্রথম কাজ পেতে আপনাকে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না।

www.joomlancers.com

এই সাইটে শুধুমাত্র Joomla এর কাজ পাওয়া যায়। Joomla হচ্ছে একটি ওপেনসোর্স কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্টসিস্টেম। যারা Joomla  পারদর্শী তারা এই সাইটে বিড করে দেখতে পারেন। 
এখানে প্রায় ৫৫০০ ফ্রিল্যান্সার রেজিস্ট্রেশন করেছে আর এখানে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ টি কাজ পাওয়া যায়।এই সাইটে কমিশন হিসেবে প্রতিটি কাজের ১০টাকা কোডারকে পরিশোধ করতে হবে। গোল্ড মেম্বার হতেহলে আপনাকে প্রতি মাসে ৫০ ডলার প্রদান করতে হবে।

www.oDesk.com
এক সাইটের ফিচার উপরে উল্লেখিত সাইট থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে প্রোভাইডারকে প্রতি ঘন্টা কাজেরজন্য টাকা প্রদান করা হয়। ক্লায়েন্ট আপনাকে সম্পূর্ণ প্রজোক্টের জন্য বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (কয়েকসপ্তাহ বা কয়েক মাস এর জন্যনিয়োগ দিতে পারে। রেজিষ্ট্রেশন করার সময় প্রতি ঘন্টায় আপনার কাজেরমূল্য উল্লেখ করে দিতে হবে। কাজ শেষে আপনি যত ঘন্টা কাজ করেছেন ঠিক ততটুকু পরিমাণ টাকা ক্লায়েন্টআপনাকে প্রদান করবে। 
কাজ করার মূহুর্তে আপনার ব্যয়কৃত সময় নির্ধারণ করার জন্য আপনাকে একটি সফ্টওয়্যার চালু রাখতেহবে।

এই সফ্টওয়্যারটি একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর আপনার ডেস্কটপের স্ক্রিসশট এবং অন্যান্য তথ্য ক্লায়েন্টেরকাছে পাঠাবে। ফলে ওই সময় আপনি কাজ করছেন কিনা ক্লায়েন্ট সহজেই নির্ধারণ করতে পারবে। তবেঅন্য সাইটগুলোর মত এখানেও অনেক কাজ পাওয়া যায় যেখানে সম্পূর্ণ প্রজেক্টের জন্য একটি নির্দিষ্ট টাকাপ্রদান করা হয়। এই সাইটে প্রতি কাজের জন্য ১০টাকা কমিশন হিসেবে প্রদান করতে হয়। যেহেতুবেশিরভাগ কাজ ঘন্টা হিসেবে প্রদান করা হয় তাই অন্য সাইটগুলোর তুলনায় এই সাইট থেকে অনেক বেশিপরিমাণে টাকা আয় করা সম্ভব।


ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিং কাজ পাওয়ার জনপ্রিয় ওয়েবসাইট আপওয়ার্কে কীভাবে কাজের সাফল্যের (জব সাকসেস স্কোর) হিসাব করা হয়, এটা নিয়ে অনেকের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দেয়। 
আগে যখন ওডেস্ক এবং ইল্যান্স (ওডেস্ক ও ইল্যান্স মিলে বর্তমানে আপওয়ার্ক) ছিল, তখন শুধু গ্রাহকের মন্তব্যের (ফিডব্যাক) রেটিং গণনা করা হতো। আপওয়ার্ক হওয়ার পর থেকে আর শুধু ফিডব্যাক গণনা করা হয় না। এখন জব সাকসেস স্কোর হিসাব করা হয়। জব সাকসেস স্কোর অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। জব সাকসেস স্কোর = সব ফিডব্যাক (পাবলিক ও প্রাইভেট) + দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক, চুক্তির পুনরাবৃত্তি ‍+ কোনো কাজ ছাড়া চুক্তি, পর্যাপ্ত ফিডব্যাকের ঘাটতি। জব সাকসেস স্কোর = (চুক্তির সফল বাস্তবায়ন – নেতিবাচক ফলাফল)/মোট কাজের ফলাফল আপওয়ার্ক প্রতি ১৪ দিন পরপর রোববারে ৬ মাস, ১২ মাস এবং ২৪ মাসের জব সাকসেস স্কোর আলাদাভাবে হিসাব করে। যে স্কোরটি বেশি হয় সেটি ফ্রিল্যান্সারদের প্রোফাইলে যোগ করে। জব সাকসেস স্কোর ৯০ বা তার চেয়ে বেশি হলে অনেক ভালো হিসেবে গণ্য হয়। ৭৫ বা এর কম হলে খারাপ হিসেবে গণ্য হয়। জব সাকসেস স্কোর ৭৫-এর চেয়ে কমে গেলে নতুন কাজ পেতে অনেক সমস্যা হয়।

দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং চুক্তির পুনরাবৃত্তি স্কোর বাড়ায়: কোনো চুক্তি যদি অনেক দিন ধরে চলে এবং নিয়মিত কাজের পারিশ্রমিকের লেনদেন হয়, তবে স্কোর বাড়ায়। আবার একই গ্রাহক বারবার কাজ দিলেও স্কোর বাড়ে।
বাজে গ্রাহকের ফিডব্যাক গণনা করা হয় না: যেসব গ্রাহক সব ফ্রিল্যান্সারের সঙ্গেই বাজে ব্যবহার করে এমন ক্লায়েন্টদের ফিডব্যাক গণনা করা হয় না এবং তাদের অ্যাকাউন্ট আপওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়।


লেনদেন হয় না এমন চুক্তি স্কোর কমিয়ে দেয়: কোনো একটা চুক্তির কাজ শুরু হওয়ার পর যদি পেমেন্ট লেনদেন না হয় তাহলে নির্দিষ্ট একটা সময় পর এটা স্কোর কমিয়ে দেয়। তাড়াতাড়ি এই কন্ট্রাক্টটি শেষ করে এই সমস্যা থেকে বাঁচা যায়।
ফিডব্যাক ছাড়া চুক্তি শেষ হলে কমে যায়: মাঝেমধ্যে ফিডব্যাক ছাড়া চুক্তি শেষ হলে কোনো সমস্যা হয় না, কিন্তু নিয়মিত ফিডব্যাক ছাড়া চুক্তি শেষ হলে স্কোর কমে যায়। গ্রাহককে অনুরোধ করে ফিডব্যাকসহ কন্ট্রাক্ট এন্ড করলে এই সমস্যা থেকে বাঁচা যায়।


লেখাঃ আমিনুর রহমান।
ফ্রিল্যান্সিং কি?

'''মুক্তপেশা''' (Freelancing), কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে মু্ক্তভাবে কাজ করাকে বোঝায়। যারা এধরণের কাজ করেন তাদের বলা হয় "মুক্তপেশাজীবী" (Freelancer)। এধরণের কাজে  কোনো নির্দিষ্ট মাসিক বেতনভাতা নেই তবে স্বাধীনতা আছে, ইচ্ছা মতো ইনকামের সুযোগ ও আছে, । এজন্য  স্বাধীনমনা লোকদের আয়ের জন্য এটা একটা সুবিধাজনক পন্থা। আধুনিক যুগে বেশিরভাগ মুক্তপেশার কাজগুলো [ইন্টারনেট|ইন্টারনেটের] মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফলে মুক্ত পেশাজীবীরা ঘরে বসেই তাদের কাজ করে উপার্জন করতে পারেন। এ পেশার মাধ্যমে অনেকে প্রচলিত চাকরি থেকে বেশি আয় করে থাকেন, তবে তা আপেক্ষিক। ইন্টারনেটভিত্তিক কাজ হওয়াতে এ পেশার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি হাজারো ক্লায়েন্টের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটে। 


ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেস গুলোতে কাজের ধরনঃ
মুক্তপেশার কাজের পরিধি অনেক বেশি। বিশ্বব্যাপী এধরণের কর্মপদ্ধতির চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা কয়েকটি কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
* সাইবার নিরাপত্তাঃ বর্তমান সময়ে সাইবার নিরাপত্তা / ইথিক্যাল হ্যাকিং ফ্রিল্যান্সিং হিসেবে খুবই জনপ্রিয় একটি পেশা। সঠিক ভাবে সাইবার নিরাপত্তার জ্ঞান অর্জন করে আপনি অনলাইনের মাধ্যমেই বিভিন্ন ব্যাক্তিগত / প্রাতিষ্ঠানিক কাজ করার মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
*লেখালেখি ও অনুবাদ: নিবন্ধ , ওয়েবসাইট কন্টেন্ট, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি, ছোট গল্প, প্রাপ্তবয়স্কদের গল্প এবং এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় ভাষান্তরকরণ উল্লেখযোগ্য।
*সাংবাদিকতা: যারা এবিষয়ে দক্ষ তারা বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকায় লেখালেখির, চিত্রগ্রহণের পাশাপাশি ইন্টারনেটভিত্তিক জনসংযোগ করে থাকেন।
*গ্রাফিক্স ডিজাইন: লোগো, ওয়েবসাইট ব্যানার, ছবি সম্পাদনা, অ্যানিমেশন ইত্যাদি।
*ওয়েব ডেভলপমেন্ট: ওয়েবসাইট তৈরি, ওয়েবভিত্তিক সফ্‌টওয়্যার তৈরি, হোস্টিং ইত্যাদি।
*কম্পিউটার প্রোগ্রামিং: ডেস্কটপ প্রোগ্রামিং থেকে ওয়েব প্রোগ্রামিং সবই এর আওতায় পড়ে।
*ইন্টারনেট বিপণন/ইন্টারনেট মার্কেটিং: ইন্টারনেটভিত্তিক বাজারজাতকরণ কার্যক্রম, যেমন ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে বিপণন।
*গ্রাহক সেবা: দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির গ্রাহককে টেলিফোন, ইমেইল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহাজ্যে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা।
*প্রশাসনিক সহায়তা: দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন কাজের ডাটা এন্ট্রি করণ, ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করা ইত্যাদি।

কয়েকটি মার্কেটপ্লেসের ঠিকানাঃ

- ফাইবারঃ ফাইবার খুবই জনপ্রিয় একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস যার মাধ্যমে আপনি আপনার সার্ভিস গুলো বিক্রি করতে পারবেন।
যেমন, আপনি ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা দিতে পারেন। বর্তমান বিশ্বে হ্যাকিং এর কার্যক্রম আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ার কারনে এবং সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি হওয়ার ফলে  প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যাক্তিরাই তাদের ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আপনাকে  ফাইবারের মাধ্যমে আপনার সার্ভিস গ্রহণ করতে পারে।
এক্ষেত্রে আপনাকে ফাইবারে একটি একাউন্ট তৈরি করে আপনার সার্ভিসটি গিগ আকারে তুলে ধরতে হবে।  [ পরবর্তী পোস্ট গুলোতে আপনার আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো।]
ওয়েবসাইট লিংকঃ

জনপ্রিয় সকল অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস নিয়ে জানতে হলে আমাদের পরবর্তী পোস্ট গুলোতে নজর রাখুন।