রাত ১০ টার পর থেকেই হঠাৎ কাজ করছে না ফেসবুক। বন্ধ রয়েছে তাদের সার্ভার। প্রবেশ করা যাচ্ছে না ইন্সট্রাগ্রামেও।

তাৎক্ষনিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে সিস্টেমের কোন আপডেট করার জন্য ফেসবুক বন্ধ থাকতেই পারে।

বাংলাদেশ সময় রাত ১০ টা) থেকে হঠাৎ ফেসবুক বিকল দেখতে শুরু করেন বিভিন্ন দেশের ব্যবহারকারীরা। বিশ্বজুড়ে ফেসবুক অচল হয়ে পড়ার এ খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে। #Facebookdown নামে ট্রেন্ডিং টপিক হিসেবেও এটি জনপ্রিয় হয়েছে। 
ফেসবুক অচল হয়ে পড়ার পরপরই ফেসবুকের একজন মুখপাত্র বলেন, ফেসবুক হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাঁরা জেনে এই সমস্যা সমাধানের কাজ শুরু করেন। ফেসবুক দ্রুত স্বাভাবিক করতে কাজ করেছে তাঁদের টিম। 




কিছু কিছু ব্যাবহারকারীরা যারা লগিন করে ছিলেন তারা নিউজফিডে প্রবেশ করতেও পারছেন না। তবে, এই সম্পর্কে এরিনা ওয়েব সিকিউরিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ফেসবুকের  যে কোন সিস্টেম আপগ্রেড করার কাজের জন্য কিছু সময়ের জন্য সার্ভার ডাউন কিংবা সমস্যা হতেই পারে। এতে ফেসবুক আইডির কোন প্রকার সমস্যা হবে না। সকল ব্যাবহারকারীদের নিশ্চিন্তে থাকার পরামর্শ ও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। 
 Outage Report এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী অসংখ্য ব্যাবহারকারীরা এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। 
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ছাড়াও টিন্ডার, হিপচ্যাট, এআইএমের মতো সেবাগুলোও অচল হয়ে পড়ার খবর বিশ্বজুড়ে অনলাইন বিভিন্ন মাধ্যমে উঠে এসেছে।

‘খাটের ওপর শুয়ে আছে একজন বৃদ্ধ। সামনে বসা ছোট্ট একটি মেয়ে। হাতে কাগজ। দেখে মনে হবে মেয়েটি সাহায্যপ্রার্থী। এমনই একটি ছবি সোমবার রাত থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। আর ছবিটির সঙ্গে ইনবক্সে দেয়া হচ্ছে একটি মেসেজ, যাতে লেখা আছে, ‘ছবিটি সবাইকে সেন্ড করো। কারণ এ মেয়েটার বাবার অপারেশন হবে। এটি যতবার সেন্ড করা হবে মেয়ের পরিবারকে ততবারই ১ টাকা করে দেবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।’

এই মেসেজ পেয়ে বাংলাদেশের আবেগী অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী তাদের বন্ধুদের ইনবক্সে তা পাঠাতে শুরু করেন। অনেকে ম্যাসেঞ্জারেও পাঠাচ্ছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে ফেসবুকে এটি ভাইরাল হয়েছে। অনেকে এই ছবি ও মেসেজটি তাদের ফেসবুক ওয়ালেও শেয়ার করছেন। এতে আবার কেউ কেউ বিরক্তিও দেখাচ্ছেন।

তবে পোস্টটি নিছক ‘প্রতারণামূলক বার্তা’ উল্লেখ করে আইটি বিশেষজ্ঞ তানজিম আল ফাহিম জাগো নিউজকে বলেন, এ বার্তা পাঠানো কিংবা শেয়ারের জন্য ফেসবুক কাউকে কোনো টাকা দেবে না।
“এ ধরনের পোস্টে অনেকেই বিরক্ত হন। তারা চাইলে শেয়ার দেয়া বা সেন্ড করা ওই ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ‘রিপোর্ট’ করতে পারেন। এতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ওই অ্যাকাউন্টধারীকে সতর্ক কিংবা তার অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে অচল করে দিতে পারে“ বলেন তিনি।
পোস্টের বিষয়ে এরিনা ওয়েব সিকিউরিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও সাইবার একাত্তরের অ্যাডমিন মো. ফাহিম জাগো নিউজকে বলেন, ফেসবুকের হোম পেজেই উল্লেখ করা আছে, ‘It's free and always will be.’ অর্থাৎ ফেসবুক ব্যবহার কিংবা পরিচালনার জন্য আপনার কাছে কোনো অর্থ নেয়া হবে না। সুতরাং আপনার কমেন্ট/লাইক, শেয়ার কিংবা ইনবক্সে পাঠানো থেকে ফেসবুক কোনো আয় করে না। এর থেকে কোনো প্রকার অর্থও তারা কাউকে দেয় না। বিভিন্ন সময় দুর্যোগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ত্রাণ দিলেও সেটা কখনোই এসব কার্যক্রমের ভিত্তিতে নয়।
তিনি বলেন, ওই ১ টাকা কিংবা ডলার যোগ হওয়ার সংবাদটি সম্পূর্ণ প্রতারণামূলক বার্তা, ইন্টারনেটের পরিভাষায় একে হোক্স (ধাপ্পাবাজি) বলে। গত কয়েক দিনে এ বার্তা ফেসবুক মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়ছে। এর কোনো ভিত্তি নেই।
ফাহিম আরও জানান, ২০০৭ সাল থেকে ফেসবুক ঘিরে এ ধরনের হোক্স চালু আছে। বিভিন্ন সময় তা পরিবর্তিত রূপে ফেসবুকে ছড়ায়। এ ধরনের লিংকে ক্লিক করে অন্যজনকে পাঠানোর মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক পরিচিতজনের কাছ থেকে এ বার্তা আসতে পারে। এ ধরনের বার্তা এলে তাতে ক্লিক না করে বা এ বার্তা অনুসরণ না করে তা ডিলিট করা বা মুছে দেয়ার অনুরোধও জানিয়েছে ফেসবুক।
কীভাবে ফেসবুক হোক্স থেকে সতর্ক হবেন?
ফাহিম জানান, হোক্স স্লেয়ার (Hoax Slayer) নামে একটি ওয়েবসাইট বিভিন্ন হোক্স পর্যবেক্ষণের কাজ করে। হোক্স সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করে। সাধারণভাবে কোনো পোস্ট শেয়ার করার আগে সন্দেহ হলে তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে পরামর্শ (সাপোর্ট) চাইতে পারেন।
এছাড়াও ফেসবুকে একটি প্রোগ্রাম রয়েছে ফ্যাক্ট চেকিং নামের। ‘ফেক নিউজ ফিল্টারিং টুল’থেকে শুরু করে ‘ফ্যাক্ট-চেক বাটন’অবধি বিভিন্ন নাম দেয়া হচ্ছে এটিকে। ফেসবুক ব্যবহারকারী যদি কোনো পোস্ট দেখে মনে করেন যে, এটা ফেক নিউজ হতে পারে তাহলে তারা পোস্টটির ওপরের ডানপাশের বাটনে ক্লিক করে সেটিকে ফেক নিউজ হিসেবে ফ্ল্যাগ করতে পারবেন।
ফেসবুকের কর্মীরা তখন সেই পোস্টটিকে দেখবেন, সেই সঙ্গে সেটিকে পাঠানো হবে বার্লিনভিত্তিক একটি নিরপেক্ষ ফ্যাক্ট-চেকিং সংগঠনের কাছে, যার নাম ‘করেক্টিভ’। করেক্টিভ যদি পোস্টের কাহিনীটিকে অনির্ভরযোগ্য মনে করে তাহলে সেটিকে ‘ডিসপিউটেড’বা ‘বিতর্কিত’বলে ফ্ল্যাগ করা হবে৷
এছাড়া আরও কয়েকটি ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ফেসবুককে সহায়তা করে থাকে।

পূর্বে প্রকাশিত হয়েছে - জাগো নিউজ
আতঙ্কের নতুন নাম ব্লু হোয়েল। একাধিক টাস্ক। অবশেষে আত্মহত্যা। গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে বিভীষিকা। ছেলে-মেয়ের দিকে বিশেষ নজর রাখতে বলেছেন স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ। সাইবার জগতের বিশেষজ্ঞরাও একাধিক পরামর্শ দিয়েছেন। রাশিয়া, অ্যামেরিকা ও ইউরোপের পর এশিয়ার ভারতেও হানা ব্লু হোয়েলের। শুধু ব্লু হোয়েল নয়, এই তালিকায় আছে আরও অনেক গেম। যা রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে অভিভাবকদের। কী সেই সব গেম ও চ্যালেঞ্জ ? জেনে রাখুন, সাবধান থাকুন।



দা টাচ মাই বডি চ্যালেঞ্জ : বাংলায় এই খেলার নাম কানামাছি ভোঁ ভোঁ। শৈশবে প্রত্যেকেই কমবেশি খেলেছে। কিন্তু অনলাইনে অত্যন্ত বিপজ্জনক খেলাগুলোর মধ্যে একটি। চোখ বেঁধে একদল ছেলেমেয়ে এই খেলায় অংশ নেয়। সেই খেলার ভিডিও করে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে হবে। অধিকাংশ সময় ভিডিওতে দেখা গেছে, শরীরের গোপন অংশে হাত দিতে দেখা গেছে ওই চোখ বাঁধা পুরুষ বা নারীকে। শেষ দু’সপ্তাহে সোশাল মিডিয়া এই চ্যালেঞ্জ খেলেছেন অসংখ্য ব্যবহারকারী। এই ধরনের ভিডিও খুব তাড়াতাড়ি ছড়ায়। সামাজিক সম্মানও নষ্ট হয়।

ডিওডোরেন্ট চ্যালেঞ্জ : শরীরের চামড়া থেকে মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূর থেকে ডিও স্প্রে করতে হবে। সেই ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে হবে। কে কতক্ষণ বেশি করতে পারছে, সেটাই চ্যালেঞ্জ। শিশু বা নাবালকদের চামড়া পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ভবিষ্যতেও সেই দাগ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

পাস আউট চ্যালেঞ্জ : WWE বা ইউটিউবের ভিডিও দেখে বাচ্চারা নিজেদের গলা টিপে ধরছে। যতক্ষণ পর্যন্ত শ্বাস রোধ না হয়, তা চলবে। সেই ভিডিও পোস্ট করে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করছে। পাস আউট চ্যালেঞ্জে মৃত্যু হয়েছে অনেক স্কুলশিশুর।

স্ন্যাপস্ট্রিক চ্যালেঞ্জ : স্ন্যাপচ্যাটে পরস্পরকে স্ন্যাপ করলে একটি পয়েন্ট পাওয়া যায়। একে বলা হয় স্ন্যাপস্ট্রিক। একদিন স্ন্যাপ না পাঠালেই সব স্কোর শূন্য। আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। এটাতেই গেমের আসল রহস্য। স্ন্যাপস্ট্রিক কাউন্ট ভালো না হলে সোশাল জগতে ভালো মর্যাদা পাওয়া যায় না। বন্ধুরা মনে করবে, আপনার শিশু ভালো বন্ধু নয়। এই থেকে হীনমন্যতায় ভোগা শুরু শিশু ও নাবালকদের। নেশায় বুঁদ হয়ে সারাদিন মোবাইলে সময় কাটাচ্ছে তারা। তাতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে আগামী প্রজন্ম।

সল্ট অ্যান্ড আইস চ্যালেঞ্জ
সল্ট অ্যান্ড আইস চ্যালেঞ্জ

সল্ট অ্যান্ড আইস চ্যালেঞ্জ : গত বছর সোশাল মিডিয়ায় এই গেমের মারাত্মক প্রভাব পড়ে। নাবালক-বালিকারা তাঁর শরীরের যে কোনও অংশে প্রথমে নুন রাখে। তারপর ঠান্ডা বরফের কিউব রাখে সেখানে। ফল হয় মারাত্মক। জ্বলে যায় শরীরের সেই অংশ। এই ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে হয়। 



এর থেকে বাঁচতে কি করা যায়?
১। প্রথমত চাই আপনার সচেতনতা। কেন আপনি অপরের নির্দেশনায় যাকে আপনি কখনও দেখেন নি, যার পরিচয় জানেন না তার কথায় কেন নিজের জীবন অকালে বিলিয়ে দিবেন! 
২। এই রকম কোন লিংক আসলে তাকে এড়িয়ে চলা। সমাজের তরুন ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে সব বয়সীদের মাঝে এই গেমের আদ্যোপান্ত সম্পর্কে বলা।
৩। আপনার সন্তানকে মোবাইলে ও কম্পিউটারে অধিক সময়ে একাকী বসে থাকতে দেখতে সে কি করছে তার খোঁজ খবর নেয়া। সন্তানকে কখনও একাকি বেশি সময় থাকতে না দেয়া এবং এই সব গেমের কুফল সম্পর্কে বলা। 
৪। সন্তানদের মাঝে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মানসিকতা সৃষ্টি করা। যাতে করে তারা বুঝতে পারে আত্মহত্যা করা বা নিজের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করা অনেক বড় পাপের কাজ। 
৫। আপনার সন্তান ও পরিবারের অন্য কোন সদস্য মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কি না সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা। কেউ যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয় তাকে সঙ্গ দেয়া।
৬। আমাদের সকলেরই ফেসবুক আইডি আছে, যাতে কিছু না কিছু অন্য দেশের অচেনা বন্ধুরাও আছে। এদের সকলের থেকে সাবধান। হতে পারে, এদের মাঝেই লুকিয়ে আছে এসকল ভয়ংকর কিছু গেমের মডারেটররা। 
বর্তমানে ইন্টারনেট দুনিয়ার এক ভয়ংকর নাম 'ব্লু হোয়েল'। এই সুইসাইড গেম বা মরণ নেশার ফাঁদে পড়ে তরুণ-তরুণীরা আত্মহত্যা করতেও পিছপা হচ্ছে না।
 
কী আছে এই গেমের মধ্যে? ফিলিপ বুদেকিন কেনই বা তৈরি করলেন এই গেম, তাই এখন আলোচনার অন্যতম ইস্যু।

ফিলিপ বুদেকিন
আরো পড়ুন - 

 
কে এই ফিলিপ বুদেকিন?
ফিলিপ বুদেকিন রাশিয়ার নাগরিক। তার ডাকনাম ফিলিপ ফক্স। তার পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশ পেতে দেখা যায়নি।
 
ফিলিপ ১৮ বছর বয়সে ২০১৩ সালে প্রথমে ব্লু হোয়েল নিয়ে কাজ শুরু করেন। প্রথমে তিনি সামাজিকমাধ্যমে 'এফ৫৭' নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেন। এরপর ৫ বছরের জন্য একটি পরিকল্পনা করেন। ৫ বছরের মধ্যে যেসব মানুষ সমাজের জন্য অপ্রয়োজনীয় (তার মতে) তাদের ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেন।
 
ফিলিপ যখন এই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেন তখন তিনি রাশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। তিনি সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মনোবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর পড়াশোনার পর ব্লু হোয়েলের বিষয়টি প্রকাশ হলে ২০১৬ সালে তাকে বহিষ্কার করা হয়। ওই সময়ে তাকে গ্রেফতার করে রাশিয়ার আইনশৃংখলা বাহিনী।
 
ফিলিপ কিশোর বয়সে তার মা ও বড় ভাইয়ের হাতে প্রচুর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন। তবে সে নিজেও মানসিকভাবে অসুস্থ বলে তদন্তকারী কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমকে জানান।
 
ফিলিপ ও তার সঙ্গীরা প্রথমে রাশিয়ার সামাজিকমাধ্যম 'ভিকে' ব্যবহার করে। সেখানে তারা একটি গ্রুপ করে। গ্রুপে ভয়ের ভিডিও ছড়ানোর মাধ্যমে কাজ শুরু করে।
 
ভয়ের ভিডিও ছড়ানোর ফলে ওই গ্রুপে প্রচুর তরুণ-তরুণী যুক্ত হয়।
 
সেখান থেকে বুদেকিনের সঙ্গীরা মিলে এমনসব তরুণ-তরুণীদের বাছাই করতে থাকে, যাদের সহজে ঘায়েল করা সম্ভব হবে।
 
সেন্ট পিটার্সবার্গ নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ফিলিপ বলেন, 'যেখানে মানুষ আছে সেখানে কিছু জীবন্ত বর্জও (মানুষ) আছে। ওইসব মানুষের সমাজে কোনো প্রয়োজন নেই। তারা হয় নিজেরা সমাজের জন্য ক্ষতি, না হয় তারা সমাজের ক্ষতির কারণ। আমি সমাজের ওইসব বর্জ্য পরিষ্কার করতে চাই।'
 
তবে তিনি সরাসরি আত্মহত্যার নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি আত্মহত্যার জন্য অনুপ্রাণিত করিনি। কিন্তু গেমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারা নিজেরাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
 
গত মে মাসে এক গোপন বিচারের মাধ্যমে ফিলিপকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি সাইবেরিয়ার একটি কারাগারে কারাভোগ করছেন বলে জানিয়েছে ডেইলি মেইল।

ব্লু হোয়েল গেম কীভাবে কাজ করে?
এটি অনলাইনভিত্তিক একটি গেম। অনলাইনে একটি কমিউনিটি তৈরি করে চলে এ প্রতিযোগিতা। এতে সর্বমোট ৫০টি ধাপ রয়েছে। আর ধাপগুলো খেলার জন্য ওই কমিউনিটির অ্যাডমিন বা পরিচালক খেলতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দেবে। আর প্রতিযোগী সে চ্যালেঞ্জ পূরণ করে তার ছবি আপলোড করবে। শুরুতে মোটামুটি সহজ এবং কিছুটা চ্যালেঞ্জিং কাজ দেয়া হয়। যেমন- মধ্যরাতে ভূতের সিনেমা দেখা। খুব সকালে ছাদের কিনারা দিয়ে হাঁটা এবং ব্লেড দিয়ে হাতে তিমির ছবি আঁকা ইত্যাদি। 
 
তবে ধাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কঠিন ও মারাত্মক সব চ্যালেঞ্জ দেয় পরিচালক। যেগুলো অত্যন্ত ভয়াবহ এবং এ খেলার সর্বশেষ ধাপ হলো আত্মহত্যা করা। অর্থাৎ গেম শেষ করতে হলে প্রতিযোগীকে আত্মহত্যা করতে হবে। তবে এই গেমের শেষ ধাপে যাওয়ার আগেই খেলোয়াড়ের মৃত্যু হতে পারে। যেমন- ছাদের কিনারায় হাঁটা বা রেললাইনে হাঁটার মতো যেসব কাজ করতে বলা হয়, ওইসব কাজ করার সময় মৃত্যু হতে পারে।
 
গেমটির বেশিরভাগ ধাপই এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, ওইসব ধাপ অতিক্রম করতে করতেই খেলোয়াড়ের মৃত্যু হতে পারে। ব্লু হোয়েলের কবলে পড়ে ৫০তম ধাপে গিয়ে যারা আত্মহত্যা করছে কেবল তাদের খবরই প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু এর আগে যারা মারা যাচ্ছে তারা ব্লু হোয়েলের ফাঁদে পড়ে মারা যাচ্ছে কিনা- তা শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

আরো পড়ুন - 

 
তরুণ-তরুণীরা কেন আকৃষ্ট হয়?
ব্লু হোয়েলে সাধারণত অবসাদগ্রস্ত তরুণ-তরুণীরা আসক্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে গভীর রাতে বা একাকী দীর্ঘ সময় যারা ইন্টারনেটে সামাজিকমাধ্যম জগতে বিচরণ করে তারা এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া তরুণ-তরুণীদের মধ্যে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার যে আগ্রহ সেটাকে কাজে লাগিয়ে ফাঁদে ফেলে এর কিউরেটররা।
 
অংশগ্রহণকারীদের প্রথমে সাহসের প্রমাণ দিতে বলা হয়। এজন্য তাদের ছোট ছোট কিছু সাহসী কাজ দিয়ে এগিয়ে নেয়া হয়। একবার এতে জড়িয়ে পড়লে আর সহসা বের হওয়ার সুযোগ থাকে না।
 
সহজ ও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সাহস আছে কি না- এমন কথায় সাহস দেখাতে গিয়ে দিনকে দিন যুবক-যুবতীরা আকৃষ্ট হচ্ছে এই গেমে। তবে একবার এ খেলায় ঢুকে পড়লে তা থেকে বের হয়ে আসা প্রায় অসম্ভব।
 
ব্লু হোয়েলে আসক্তদের চিনবেন কীভাবে?
যেসব কিশোর-কিশোরী ব্লু হোয়েল গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে তারা সাধারণভাবে নিজেদের সব সময় লুকিয়ে রাখে। স্বাভাবিক আচরণ তাদের মধ্যে দেখা যায় না। দিনের বেশিরভাগ সময় তারা কাটিয়ে দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। থাকে চুপচাপ। কখনও আবার আলাপ জমায় অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে। গভীর রাত পর্যন্ত ছাদে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় অনেককে। একটা সময়ের পর নিজের শরীরকে ক্ষত-বিক্ষত করে তুলতে থাকে তারা।
 
এর থেকে বাঁচতে কী করা যায়?
এই মরণ ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য মনোবিজ্ঞানীরা কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন। সেগুলো হচ্ছে-
 
প্রথমতো আপনাকেই সচেতন হতে হবে। কেন আপনি অপরের নির্দেশনায় কাজ করবেন। আপনি যাকে কখনও দেখেননি, যার পরিচয় জানেন না, তার কথায় কেন চলবেন বা তার কথামতো কেন কাজ করবেন- সেটি নিজেকেই চিন্তা করতে হবে।
 
এরকম কোনো লিংক সামনে এলে তাকে এড়িয়ে চলতে হবে।
 
সমাজের তরুণ-তরুণীদের মাছে এই গেমের নেতিবাচক দিক সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে হবে।
 
সন্তান, ভাই-বোন বা নিকটজনকে মোবাইলে ও কম্পিউটারে অধিক সময়ে একাকী বসে থাকতে দেখলে সে কী করছে, তার খোঁজ-খবর নিতে হবে। সন্তানকে কখনও একাকী বেশি সময় থাকতে না দেয়া এবং এসব গেমের কুফল সম্পর্কে বলা। 
 
সন্তানদের মাঝে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মানসিকতা সৃষ্টি করা। যাতে তারা আত্মহত্যা করা বা নিজের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করা অনেক বড় পাপ- এটা বুঝতে পারে।
 
সন্তান ও পরিবারের অন্য কোনো সদস্য মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কিনা- সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা। কেউ যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয় তাকে সঙ্গ দেয়া।
 
কৌতূহলি মন নিয়ে এই গেমটি খেলার চেষ্টা না করা। কৌতূহল থেকে এটি  নেশাতে পরিণত হয়। আর নেশাই হয়তো ডেকে আনতে পারে আপনার মৃত্যু। 

কোন কোন দেশে আছে ব্লু  হোয়েল?
এ পর্যন্ত ব্লু হোয়েল পৃথিবীর কোন কোন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, তার সঠিক হিসাব নেই। তবে রাশিয়া, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, চিলি, চীন, ভারত, ইটালি, কেনিয়া, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, সৌদি আরব, সাইবেরিয়া, স্পেন, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও উরুগুয়ে ব্লু হোয়েল শনাক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশে ব্লু হোয়েলের সম্পর্কে গুজব উঠলেও এর কোন অস্তিত্ব এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। 

১৮৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বপ্রথম যন্ত্রের সাহায্যে পাঠানো হয় ছোট্ট একটা বার্তা। আধুনিককালের এসএমএস-এর আদি সংস্করণ বলা যেতে পারে একে। মাধ্যমটির নাম টেলিগ্রাম।টেলিগ্রাফ যন্ত্র আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল যখন টেলিগ্রাফ যন্ত্র আবিষ্কার করেন সারা পৃথিবীতে পড়ে যায় হৈ চৈ। এরপর প্রায় টানা ১৭০ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে বিশ্বজুড়ে খবর আদান-প্রদানে ব্যবহূত হয় এই মাধ্যম। কি আনন্দ, কি বেদনা সব সংবাদই মুহূর্তে পৌঁছে গেছে প্রাপকের কাছে। বহু সংবাদ টেলিগ্রাম নিজেই বয়ে নিয়ে গেছে বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।


বাংলাদেশে টেলিগ্রাম

বাংলাদেশে প্রায় ৮শ টেলিগ্রাফ অফিস ছিল। আর এখন ৬৪ জেলার আছে ৪০টির মতো অফিস। তাও চলছে ধিক ধিক করে। কোথাও ঘরটি পরিত্যক্ত হয়েছে। আর কোন ঘরে জমেছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। তবে ওই ঘরগুলোতে এখন আর নেই টেলিগ্রাফের টরে টক্কা যন্ত্র। কোথাও আছে একটি ফ্যাক্স মেশিন, আবার কোথাও আছে একটি ল্যান্ড টেলিফোন।আবুল হোসেন আরও বলছিলেন, টরে টক্কা যন্ত্রগুলো কেজির দরে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এখন আসলে কারা টেলিগ্রাম করেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবহাওয়া অধিদফতরই একমাত্র নিয়মিত গ্রাহক তাদের। এক-দেড় লাখ টাকা তাদের সেখান থেকে আয় হয়। সব জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকায় আবহাওয়া বার্তা পাঠানো হয় টেলিগ্রামের মাধ্যমে। এগুলো তারা টরে টক্কা যন্ত্র দিয়ে নয়, ফ্যাক্সের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন। যেখানে ফ্যাক্স নেই সেখানে পাঠানো হয় ল্যান্ডফোনের মাধ্যমে। সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের ছুটির জন্য এখনো কোথাও কোথাও টেলিগ্রামের দরকার হয়। কোন সদস্য ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার পর বিপদ-আপদে ছুটি বাড়াতে শরণাপন্ন হন টেলিগ্রামের। কিছুদিন আগ পর্যন্তও বাংলাদেশ ব্যাংকের গোপন তথ্য আদান-প্রদান হতো টেলিগ্রামেই। দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশের শুরু থেকেই দাপটের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করেছে এই টেলিগ্রাম মাধ্যমটি। ১৯৮১ সালে সৌদি সরকারের অনুদানে টেলিগ্রাফ অফিস থেকে টাইপ রাইটার তুলে দিয়ে বসানো হয় টেলিপ্রিন্টার। তখন এক অফিসে বসে কোড ব্যবহার করে মোর্স কি দিয়ে লিখলে সংশ্লিষ্ট অফিসে কয়েক শব্দের একটা লেখা বের হত। যদিও তাতে অনেক সময় ভুল হলেও পরে তা ঠিক করার ব্যবস্থাও ছিল।

বাংলাদেশে টেলিগ্রাম চালু থাকলেও এর মূল প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) তাদের ওয়েবসাইটে টেলিগ্রামকে পাঠিয়ে দিয়েছে ‘জাদুঘরে’। টেলিগ্রামের বর্ণনা, এটি কী এবং এই সংক্রান্ত নানা তথ্য রাখা হয়েছে সংস্থাটির ওয়েবসাইটের ‘মিউজিয়াম’ লিংকে।

মুক্তিযুদ্ধে টেলিগ্রামের ভূমিকা

যখন ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে গণহত্যা শুরু করে। ৬ এপ্রিল ১৯৭১ ঐতিহাসিক মার্কিন দূতাবাস থেকে একটি তারবার্তা পাঠানো হয়েছিল ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে। ঢাকায় কর্মরত মার্কিন কর্মকর্তারা ২৫ মার্চের ‘কলঙ্কিত রাতের’ গণহত্যা এবং সে বিষয়ে নিক্সন-কিসিঞ্জারের অন্ধ ইয়াহিয়া ঘেঁষা নীতির প্রতিবাদ জানাতে সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন। তারা খুব ভেবেচিন্তে একটি তারবার্তা লিখেছিলেন যাতে স্বাক্ষর করেছিলেন বাড ও তার ২০ জন সহকর্মী। তারা তাতে ঢাকায় ইয়াহিয়ার গণহত্যার প্রতি ওয়াশিংটনের অব্যাহত নীরবতার নিন্দা করেছিলেন। বাড তাতে কেবল স্বাক্ষরই দেননি, বাড়তি এক ব্যক্তিগত নোটও দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, পূর্ব পাকিস্তানে এখন যে সংগ্রাম চলছে, তার সম্ভাব্য যৌক্তিক পরিণতি হলো বাঙালিদের বিজয় এবং এর পরিণতিতে একটি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা।’ হেনরি কিসিঞ্জার এই টেলিগ্রাম বা তারবার্তার জন্য আর্চার কেন্ট বাডকে নির্বাসন দণ্ডও দিয়েছিলেন।
এক সময় এদেশের সংবাদপত্রগুলোও এই টেলিগ্রামের নিউজে নির্ভর করতো। বিশেষ করে জরুরি নিউজগুলো মফস্বল শহর থেকে সংবাদদাতারা পাঠাতেন টেলিগ্রামের মাধ্যমে। আর তাই সে সময় সংবাদের শুরুতেই লেখা হতো ‘নিজস্ব সংবাদদাতার তার’। এমনিভাবে সংবাদপত্রসহ বহুবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়েছে এই টরে-টক্কার টেলিগ্রাম। টেলিগ্রাম অফিসে গেলে সেই টরে-টক্কার শব্দ শোনা যেতো। কিন্তু এখন আর সেই টরে-টক্কা নেই। নেই টেলিগ্রাম অফিসও।
মোর্স কোড , সাংকেতিক ভাষায় বার্তা পাঠান বন্ধুদের!! পড়তে ভিসি ট করুন এখানে 
২০১৩ সালে রাশিয়ায় শুরু হয় ওই মারণ খেলা৷ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে দুবছর পরে৷ প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, নীল তিমিরা মারা যাওয়ার আগে জল ছেড়ে ডাঙায় ওঠে৷ যেন আত্মহত্যার জন্যই৷ সেই থেকেই এই গেমের নাম হয়েছে ‘ব্লু হোয়েল' বা নীল তিমি৷
ইদানীং ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে একাধিক দুর্ঘটনা এবং আত্মহত্যার ঘটনায় নাম জড়িয়েছে ‘ব্লু হোয়েল গেম'-এর৷ হু হু করে বাড়ছে আত্মহননের ঘটনা৷ পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন মাসে রাশিয়া এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় মোট ১৬ জন তরুণীর আত্মহত্যার খবর মিলেছে৷ এদের মধ্যে সাইবেরিয়ার দুই স্কুলছাত্রী য়ুলিয়া কনস্তান্তিনোভা (১৫) এবং ভেরোনিকা ভলকোভা (১৪) একটি বহুতলের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে৷ তদন্তে নেমে পুলিশের নজরে আসে এই ‘ব্লু হোয়েল সুইসাইড গেম'৷ শুরুর টাস্কগুলি অবশ্য তেমন ভয়ংকর নয়৷ বরং বেশ মজারই৷ আর সেই কারণেই এই গেমের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা৷

প্রথমে সাদা কাগজে তিমি মাছের ছবি এঁকে শুরু হয় খেলা৷ তারপর খেলোয়াড়কে নিজেরই হাতে পিন বা ধারালো কিছু ফুটিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে আকঁতে হয় সেই তিমির ছবি৷ একা ভূতের ছবি দেখতে হয়, আবার ভোর চারটে কুড়ি মিনিটে ঘুম থেকেও উঠতে হয়৷ চ্যালেঞ্জের মধ্যে অতিরিক্ত মাদকসেবনও রয়েছে৷ এই খেলায় প্রত্যেকেই মারা গিয়েছেন, এমনটা নয়৷ মারাত্মক আঘাত নিয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জাও লড়ছেন অনেকে৷ গেমের লেভেল যত এগোয়, ততই ভয়ংকর হতে থাকে টাস্কগুলি৷ এই টাস্কগুলিতে অংশগ্রহণের পর সেই ছবি পোস্ট করতে হয় এর গেমিং পেজে৷জার্মানির আরেক গেম ডিজাইনার ক্যারোলিন গেপার্ট৷ তার নিজের একটি গেম তৈরির কোম্পানি রয়েছে, যার নাম ‘ইয়ো মেই’৷ শুরুতে কাজ করতেন একটি কোম্পানিতে৷ সেখানে কাজ শিখে পরে নিজেই নিজের সংস্থাটি খোলেন৷ কিন্তু তিনি বুঝে উঠতে পারেন না, কেন গেম শিল্পে মেয়েদের উপস্থিতি এতটা কম৷
প্রতিযোগিতার একেবারে শেষ পর্যায়ে, অর্থাৎ ৫০তম টাস্কের শর্তই হলো আত্মহনন৷ রাশিয়া পুলিশের আশঙ্কা, সাম্প্রতিককালে গোটা বিশ্বে আত্মঘাতী হওয়া অন্তত ১৩০ জনের আত্মহননের পেছনে রয়েছে এই ‘ব্লু হোয়েল সুইসাইড গেম'৷ এই গেমিং অ্যাপ মোবাইলে একবার ডাউনলোড হয়ে গেলে তা আর কোনোভাবেই ডিলিট করা সম্ভব নয়৷ শুধু তাই নয়, ওই মোবাইলে ক্রমাগত নোটিফিকেশন আসতে থাকে যা ওই মোবাইলের ইউজারকে এই গেম খেলতে বাধ্য করে৷

ভূগোলের শিক্ষক মৌসম মজুমদারের কথায়, ‘‘এই সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে৷ কেন ছেলে-মেয়েরা কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইলে বেশি সময় দিচ্ছে, অনেক অভিভাবকের সেদিকে তাকানোর সময় নেই৷ ফলে বিপদ তাদের নজর এড়িয়ে ঘরে ঢুকছে৷ বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানদের আরও বেশি সময় দেওয়াই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান৷'


ব্লু হোয়েল'-এর মতো বিপজ্জনক অনলাইন গেমস-এর লিঙ্ক সরানোর নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার৷ গুগল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, মাইক্রোসফ্ট এবং ইয়াহু থেকে অবিলম্বে এই লিংক সরাতে হবে৷ কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক সূত্রে খবর, অনলাইন গেমসের নেশায় মেতে বিশ্ব জুড়েই একাধিক দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে৷ ভারত তার ব্যতিক্রম নয়৷ সম্প্রতি মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের একাধিক ঘটনার খবর শোনা গিয়েছে৷ তাতে যে ‘ব্লু হোয়েল'-ই জড়িত তেমন অভিযোগও উঠেছে৷ সরকার যে নির্দেশ পাঠিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ‘অবিলম্বে ব্লু হোয়েল বা এ ধরনের বিপজ্জনক গেমসের লিঙ্ক সরিয়ে ফেলতে হবে৷' কেন্দ্রীয় আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের নির্দেশের পরই ওই পাঁচ সংস্থাকে ‘ব্লু হোয়েল' সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে৷

ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ঋতম গিরি মনে করেন, মারণ এই খেলা থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করার একমাত্র উপায় হলো বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা৷ জলজ্যান্ত মানুষের অবহেলা থেকেই ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন গেমের দিকে ঝুঁকছে৷
ফিলিপ বুদেইকিন নামে সাইকোলজির এক প্রাক্তন ছাত্র নিজেকে ওই গেমের আবিষ্কর্তা বলে দাবি করে৷ বছর একুশের ওই রুশ যুবকের দাবি, যারা মানসিক অবসাদে ভোগেন, প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার কথা ভাবেন, তাদের আত্মহত্যার জন্য মজাদার পথ বাতলাতেই এই গেমের ভাবনা৷ ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে৷ পুলিশকে ফিলিপ বলেছে, ‘‘সমাজকে পরিচ্ছন্ন করাই” নাকি তার উদ্দেশ্য৷

বেশ কয়েক বছর ধরেই রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে অনলাইন গেম, বিশেষত অভিভাবকদের কাছে৷ তবে শুধু অভিভাবকরাই নন, অনলাইন গেমের প্রতি তরুণ প্রজন্মের আসক্তি চিন্তা বাড়িয়েছে মনোবিজ্ঞানী এবং সমাজবিজ্ঞানীদেরও৷ শিশুদের বুদ্ধির স্বাভাবিক বিকাশের ক্ষেত্রেও নাকি বড়সড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন ধরনের গেম৷ অনলাইন গেম খেলতে গিয়ে বিশ্বজুড়ে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, বাড়ছে দুর্ঘটনাও৷ এর সঙ্গে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। 
মাইক্রোসফট সম্প্রতি একটি ঘড়ি তৈরি করেছে যেটি পারকিনসনস রোগের মানুষদের আরও স্পষ্টভাবে লিখতে সাহায্য করতে পারে। এমা ওয়াচ নামের এই ওয়ারেবলটি মস্তিষ্কে স্পন্দন প্রেরণ করে যা হাতের কাপাকাপির নিয়ন্ত্রন করতে সহায়তা করে।


পারকিনসনস ডিজিজের সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। “নিউরোডিজেনারেটিভ” ক্যাটাগরির এই রোগে মানুষের মস্তিষ্কের মিডব্রেইনের সাবস্টানশিয়া নাইগ্রা নামক স্থানের কোষগুলো ধীরে ধীরে মারা যেতে থাকে। এই কোষগুলো ডোপামিন নামের একটি নিউরোট্রানসমিটার তৈরি করে, এরা মারা যাওয়ায় ডোপামিনের ঘাটতি তৈরি হয়, ফলে মোটর ফাংশনে নানা উপসর্গগুলো দেখা দেয়। প্রধান উপসর্গগুলো হলো হাত-পায়ের অনিয়ন্ত্রিত কাপাকাপি, নড়াচড়া ধীর হয়ে যাওয়া, মাংশপেশী শক্ত হয়ে যাওয়া, হাঁটতে না পারা ইত্যাদি। বিশেষ করে হাতের কাঁপুনির ফলে শার্টের বোতাম লাগানো থেকে চামচে করে খাওয়া এসব সাধারন কাজও করতে অসুবিধায় ভুগেন পারকিনসনস ডিজিজের রোগীরা। লেখা বা আঁকাআঁকির মতো সুক্ষ্ণ কাজগুলো তো আরো বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে পারকিনসনসের রোগীরা প্রায়শই ডিপ্রেশনে আক্রান্তও হয়ে পরেন। বিশ্বজুড়ে ১০ মিলিয়নের বেশি লোক এতে আক্রান্ত।

 মাইক্রোসফট তার বিল্ড কনফারেন্সের সময় ঘড়ি উন্মোচন করে। যদিও এটি এখন শুধুই একটি প্রোটোটাইপ, তবে নির্দিষ্ট কিছু রোগে আক্রান্তদের জন্য এটি অনেক বড় একটি আশার আলো নিয়ে এসেছে। এমা ওয়াচকে নামকরণ করা হয়েছে এমা লটনের নামে। এমা একজন গ্রাফিক ডিজাইনার যিনি মাইক্রোসফ্টের রিসার্চ ইনোভেশন ডাইরেক্টর হেইয়ান ঝ্যাংয়ের একজন বন্ধু, এবং পারকিনসনস রোগে আক্রান্ত একজন গ্রাফিক ডিজাইনার। ঝ্যাং বিশেষ করে তার জন্য ঘড়ি তৈরি করেছেন। এটিতে ছোট ছোট ভাইব্রেশন মোটর আছে, তার মাধ্যমে ডিভাইসটি কম্পন তৈরি করতে থাকে এবং মস্তিষ্ককে বিভ্রান্ত করে এবং ব্যস্ত রেখে অনাকাংখিত কাপাকাপি তৈরি করা থেকে বিরত রাখে। ফলে লেখালেখির কাজটা সহজ করে তোলে, যা একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের জন্য সবচেয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। লটন একটি নির্দিষ্ট রিদমিক কম্পন সিরিজ ব্যবহার করেন, তবে এই ডিভাইসের প্যাটার্নটি একটি উইন্ডোজ ১০ ট্যাবলেটের অ্যাপ ব্যবহার করে কাস্টমাইজ করা যায়।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেনস এবং সেন্সর কাজে লাগিয়ে পারকিনসন এর রোগীদের কিভাবে আরো সাহায্য করা যায় সে ব্যাপারে ঝ্যাং গবেষনা আরো চালিয়ে যেতে চান। পারকিনসনস ডিজিজের মত স্নায়ুতন্ত্রের ডিজেনারেটিভ রোগগুলো চিকিৎসকদের কাছে বহু বছর ধরেই চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে রয়েছে। তার মূল কারণ নিউরাল কোষ সাধারনত রিজেনারেট করে না। কাজেই শরীরের অন্যান্য স্থানে ইনজুরি হলে তা মোটামুটি মেরামত হতে পারে, এমনকি কিছু স্থানে রিজেনারেশন এত চমৎকার হয় যে তা নতুনের মতোই হয়ে ওঠে, কিন্তু ব্রেইন বা স্পাইনাল কর্ডের ক্ষেত্রে তা হয় না। এতদিন পর্যন্ত এসব রোগের ক্ষেত্রে এক্সপেরিমেন্টাল কিছু ড্রাগ ব্যবহার করা হয়। ষাটের দশকে রয়াল জেলি টাইপের কিছু ভেষজ চিকিৎসা ব্যবহার করা হতো। শার্লক হোমস সিরিজের শেষ দিকের বইতে জীবনের শেষ প্রান্তে শার্লক হোমসকে বার্ধক্যজনিত কারণে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রষ্টতাতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়, সে সময় হোমস সুদূর চীন থেকে রয়াল জেলি আনিয়ে নেন।
 প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ফলে এসব রোগে আক্রান্তদের জীবন আগের চেয়ে সহজতর হতে পারে।